ইসমাম পারভেজ কনক
ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রথমবারের মত যুক্ত হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল ব্যবস্থা। ২০.১ কিলোমিটারব্যপী একটি মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সঙ্গে আজ বুধবার এক ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের সরকার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্মাণকাজ শেষ হবার পর এটি ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও যানজট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
জাইকার সঙ্গে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কার্যত শুরু হল বহুল আলোচিত মেট্রোরেল স্থাপনের কার্যক্রম।
প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবকাঠামো নির্মান প্রকল্প।
"পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত ডিজাইন ও পরিকল্পনার কাজটি করবে। আগামী জুনের মধ্যেই আশা করি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারবো।"
মোহাম্মদ শফিকুল আযম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ
চুক্তি অনুযায়ী, জাইকা প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ ব্যয় অর্থাৎ ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা দেবে কয়েকধাপে। এর মধ্যে প্রথমধাপে জাইকার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ১০১৮ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আযম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে জাইকার কাছ থেকে প্রথম ধাপে পাওয়া অর্থ মূলত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ব্যয় করা হবে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত ডিজাইন ও পরিকল্পনার কাজটি করবে। আগামী জুনের মধ্যেই আশা করি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারবো। এরপরে আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারন করা হবে।
মি আযম আরো জানান যে ২০২১ সালে মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালুর প্রাক্কলিত সময় ধরা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টেদর মতে ২০.১ কিলোমিটারব্যপী এই রেলপথে ১৬টি ষ্টেশন থাকবে।
বলা হচ্ছে, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকার বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে মেট্রোরেলের মত গণপরিবহনই হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা।
"মেট্রোরেল প্রতি ঘন্টায় ৮০,০০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ফলে মেট্রোরেল স্থাপিত হলে রাস্তায় যাত্রী এবং পরিবহন উভয়ের ওপরই চাপ কমবে।"
ড: এস এম সালেহউদ্দিন, পরিবহন বিশেষজ্ঞ
ঢাকা যানবাহন সম্বন্বয় বোর্ডের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞ ডক্টর এস এম সালেহউদ্দিন বলেন কোনো শহরে ১ কোটির ওপর জনসংখ্যা থাকলেই মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহন বৃদ্ধি করা উচিত, তাতে যাত্রী পরিবহনের চাপ সামলানো সহজ হতে পারে।
মেট্রোরেল প্রতি ঘন্টায় ৮০,০০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ফলে মেট্রোরেল স্থাপিত হলে রাস্তায় যাত্রী এবং পরিবহন উভয়ের ওপরই চাপ কমবে।
মেট্রো রেলপথ উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত স্থাপন করা হবে। তবে, শুরুতে থাকা ডিজাইনে রুটটি বিজয় সরনি হয়ে মতিঝিল যাবার কথা ছিল।
পরে, বিমান বাহিনীর আপত্তির মুখে তা পরিবর্তন করা হয়। নতুন ডিজাইনে তা সংসদ ভবন সংলগ্ন খামারবাড়ি হয়ে যাবে। আর এতে আপত্তি তুলছেন ঢাকার পরিবেশবিদ ও স্থপতিদের একটি অংশ।
স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, এতে সংসদ ভবনের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা দুটোই হুমকির মুখে পড়বে।
যদি এই রুটটি পরিবর্তন না করা হয়, তবে দেশের সচেতন জনগন ও পরিকল্পনাবিদরা সেটি মানবেন না।
তবে ২০২১ সাল নাগাদ নির্মাণকাজ শেষ হবার কথা থাকলেও মেট্রো রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালে।
আর যথাসময়ে চালু হলে মেট্রোরেল দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন