ইসমাম পারভেজ কনক
কানু কুমার নাথ - ছবি : সংগৃহীত |
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কানু কুমার নাথ একই সাথে দুটি পদে গত দুই যুগ ধরে নিয়মিত চাকরি করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি এতদিন ধরে দুই পদের সরকারি বেতন-ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এসেছেন। জানা গেছে, প্রতি মাসে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।
কানু কুমার নাথ একটি কলেজের বাংলা বিষয়ের এমপিওভুক্ত অধ্যাপক এবং একই সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক ব্যক্তির দ্বৈত জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কানু কুমার নাথের একই সাথে দুই পদে চাকরি করার তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কানু কুমার নাথ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার হেঁয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিষয়ের অধ্যাপক। ১৯৯৪ সালে নিয়োগ পেয়ে তিনি এ কলেজে এমপিওভুক্ত হন এবং একই পদে কর্মরত আছেন ২৬ বছর ধরে। তথ্য গোপন করে তিনি একই সাথে ১৯৯৫ সাল থেকে ২৫ বছর ধরে হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে কর্মরত আছেন।
ফটিকছড়ি উপজেলার হেঁয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান জানান, ‘কানু কুমার নাথ ১৯৯৪ সালে বাংলা প্রভাষক পদে এ কলেজে নিয়োগ পান এবং এপিওভুক্ত হন। হাটহাজারী উপজেলা ইউএনও মহোদয় মারফত জানতে পারি তিনি হাটহাজারীতে একটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে কর্মরত আছেন। ইউএনও মহোদয় আমাদের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছেন, আমরা কলেজ থেকে তথ্য দিয়েছি।’
অধ্যক্ষ আরো জানান, ‘এ কলেজে এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষক হিসেবে তথ্য গোপন করে অন্যত্র আরো একটি পদে চাকরি করেন জেনে আমরা কলেজ থেকে অধ্যাপক কানু কুমার নাথকে লিখিত শোকজ করেছি। তাকে না পেয়ে শোকজটি মিরসরাই উপজেলায় তার স্থায়ী ঠিকানায় ডাকে পাঠানো হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এর উত্তর দিতে বলা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।’
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি সুমন নামের এক ব্যক্তির ভুল তথ্যে দু'বার সনদ প্রদান, সচিবের স্থলে বহিরাগতের (ক্যাজুয়াল স্টাফ) স্বাক্ষর ও ১২ বছর ধরে জন্ম কিংবা মৃত্যু সনদে সচিবের স্বাক্ষরের স্থানে নিজে স্বাক্ষর করায় সচিব কানু কুমার নাথকে শোকজ করা হয়েছিল। একই সাথে যাচাই-বাছাই না করে বহিরাগতের স্বাক্ষরে সনদ প্রদান করায় শোকজ করা হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (প্যানেল চেয়ারম্যান) গাজী মো: আলি হাসানকেও। মূলত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অবৈধভাবে মো: বেলাল নামের একজন ক্যাজুয়াল স্টাফ নিয়োগ দিয়ে সচিবের কাজ সেরে নিতেন। ওই স্টাফের বেতন ইউনিয়ন পরিষদ কোষাগার থেকে দেয়া হতো।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রুহুল আমিন জানান, ‘কানু কুমার নাথ হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। সম্প্রতি ভুল তথ্য দিয়ে এক ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদে ইউপি সচিবের স্বাক্ষরের স্থলে বহিরাগত একজনকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়েছেন এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। এজন্য তাকে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (প্যানেল চেয়ারম্যান) গাজী মো: আলি হাসানকে শোকজ করা হয়। এ শোকজ ও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কানু কুমার নাথের গোপন রহস্য।’
ইউএনও আরো জানান, ‘কানু কুমার নাথের চাটুকারিতা টের পেয়েই সকল তথ্য উদঘাটন করি। তিনি তথ্য গোপন রেখে একসাথে দু'টি চাকরি করছেন ও সরকারি টাকা আত্মসাত করছেন। এছাড়া অবৈধভাবে ক্যাজুয়াল স্টাফ নিয়োগ দিয়ে সরকারি টাকা অপচয় করেছেন। বহিষ্কার করা হয়েছে সেই অবৈধ ক্যাজুয়াল স্টাফ বেলালকে।’
তিনি আরো জানান, ‘ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের বরাবরে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সচিবের পাশাপাশি এমপিওভুক্ত কলেজে শিক্ষকতার ব্যাপারে স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে কানু কুমার নাথের মুঠোফোনে কল দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন