সেক্সের প্রসঙ্গ মানুষ এড়িয়ে যান৷ যত তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন, এড়িয়ে যেতে থাকেন, ততই বাচ্চাদের কাছে তা নিষিদ্ধ ফলের মতো হাতছানি দেয়৷ অথচ, বিষয়টি একেবারে স্বাভাবিক৷ সেই স্বাভাবিক বিষয়টি এভাবে অস্বাভাবিক করার জন্য ছেলে-মেয়েদের সামনে সবসময় হাতছানি থাকে৷ তারা ভুলের ফাঁদে জড়িয়ে পড়তে থাকে অনেকসময়৷
চ্যারিটির মতো এই আলোচনা, শিক্ষা বাড়ি থেকেই শুরু হওয়া উচিত৷ আর সেখানেই মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনের দায়িত্ব এসে পড়ে৷ এসে পড়ে যৌন শিক্ষা দেয়ার কথা৷ সবকিছু গোপন করতে যাবেন না৷ তাতে বিকৃতিরই জন্ম হয়৷ তার বেশি নয়৷ তাই পাঠক্রমে যৌন শিক্ষা রাখা খুবই জরুরি৷ আর কতদিন স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে নিষিদ্ধ মোড়কে অযথা মুড়ে রাখবেন৷ বাচ্চারা ভুলভাল জানবে৷ তার চেয়ে স্বাভাবিক বিষয়, স্বাভাবিকভাবে জানুক৷ বাবা-মা, স্বজনেরা তাতে উৎসাহ দিন৷
তবে মানসিকতার বদল তো শুধু একটি বিষয়ে হলে হবে না৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরো প্রচুর বিষয়৷ ভারতে প্রতি পদেই তো মানসিকতার বদল দরকার৷ ২০১৬ সালে ভারতে সাত হাজার একশটি পণ সংক্রান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছে, শুধু বেঙ্গালুরুতে ২০১৯ সালে ৭৩৯টি পণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে৷ ধর্ষণের ঘটনার কথা দেখলে তো লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে যায়৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসাব, ২০১৯ সালে ভারতে প্রতিদিন ৮৮টা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ তার সঙ্গে আছে অনার কিলিং৷ ভিন্ন জাতে বিয়ে, ভিন্ন সম্প্রদায়ে বিয়ে, একই গোত্রে বিয়ে করতে গেলে নিজের মেয়ে বা ছেলেকে মেরে ফেলার নাম হলো অনার কিলিং৷ কার মর্যাদা? নিজের পরিবারের, জাতের, গ্রামের? মাঝখানে তো খাপ পঞ্চায়েত প্রকাশ্যে রায় দিত, কোন বিয়ে বৈধ, কোনটা অবৈধ৷ ভোট হারাবার ভয়ে সরকার তাদের ছুঁতে ভয় পেত৷
সকলের নিজের জীবন নিজের ইচ্ছেমতো কাটাবার স্বাধীনতা আছে৷ সেখানে মর্যাদার নামে, ধর্মের নামে, পরিবারের নামে অথবা নিজেদের ধ্যান-ধারণার দোহাই দিয়ে অন্যের জীবন নষ্ট করার কোনো অধিকার বাবা, মা, পাড়া, প্রতিবেশীদের নেই৷
বাচ্চাদের জন্য তো সবকিছুতেই শুধু না৷ সেই না-রাজ্য থেকে বেরিয়ে না এলে ভুগতে হবেই৷ আর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সব চেয়ে বেশি দরকার বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুদের মতো মেশা৷ কোনো বাবাগিরি নয়৷ নির্দেশ নয়৷ একেবারে বন্ধু হয়ে যাওয়া৷ আমার সন্তানরা আমার সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে৷ করা উচিত৷ আমরা নিজেরা ছেলেবেলায় হয়ত কখনো করিনি৷ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কখনোই করব না৷ সেই বন্ধুত্বের আলোচনা ও পরামর্শ দিয়ে দেখুন৷ কখনো লোকশান হবে না৷ সেখানে সেক্স থেকে শুরু করে মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত যে কোনো বিষয় আসতে পারে৷ তবে তার আগে নিজের চিন্তাবাবনাতেও কিঞ্চিত পরিবর্তন করতে হবে৷ বেরিয়ে আসতে হবে সংকীর্ণ সামাজিক ভাবনার পরিসর থেকে৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন