ইসমাম পারভেজ কনক
অধ্যাদেশ নয়, সংসদে আইন সংশোধনের মাধ্যমেই ২৮ জানুয়ারির মধ্যে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই’ ফল প্রকাশের বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও অনুসমর্থন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ও মন্ত্রীরা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ (সংশোধন)’, ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০১৮’ ও ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২০’-এর খসড়ার সংশোধনের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বিধান রয়েছে, পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করতে হবে। যেহেতু এবার পরীক্ষা নেয়া যায়নি, সে কারণে ৭-১০ দিনের মধ্যে রেজাল্ট দিতে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
তিনি বলেন, তবে মন্ত্রিসভায় আলোচনায় দেখা গেল, আর মাত্র সাতদিন পর সংসদ বসবে। যেহেতু এরই মধ্যে সংসদ অধিবেশনের আহ্বান করা হয়েছে এবং তা একেবারেই কাছে, সেহেতু মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এ নিয়ে অধ্যাদেশের প্রয়োজন নেই। অধিবেশনের প্রথম দিনই এটি উত্থাপন করে দু-তিনদিনের মধ্যে আইন করে যাতে ২৫, ২৬ বা সর্বোচ্চ ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ফল প্রকাশ করা যায়, সে বিষয়েই আজ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীর মতো ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও নেয়া যাচ্ছে না। সেদিন তিনি বলেছিলেন, অষ্টমের সমাপনী ও এসএসসির ফলাফলের গড় করে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হবে।
এদিকে গতকালের বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে অনুসমর্থন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। এটি বাস্তবায়নে মন্ত্রিসভার অনুসমর্থনের প্রয়োজন ছিল, সেজন্য তা গতকালের বৈঠকে তা উত্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা এতে প্রয়োজনীয় অনুসমর্থন দেয়ার পাশাপাশি আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তি করা যায় কিনা, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১০ সাল থেকে ভুটানকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভুটান বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে ৯২টি পণ্যে। নতুন চুক্তির ফলে ভুটান আরো ১৬টি ও বাংলাদেশ আরো ১০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সেজন্য মন্ত্রিসভা থেকে বলা হয়েছে, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) যত করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে; যাতে করে বাণিজ্য আরো সম্প্রসারণ করা যায়।
সচিব আরো জানান, মন্ত্রিসভা কাস্টমস আইন, ২০২১-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া দেশের সিভিল কোর্টগুলোয় বিচারকদের আর্থিক এখতিয়ারের পরিমাণ বাড়িয়ে ‘দ্য সিভিল কোর্টস (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২১’-এর খসড়ারও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার (জমি বা সম্পত্তির মূল্য) ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ টাকা, জ্যেষ্ঠ সহকারী জজের ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা এবং আপিল শুনানির ক্ষেত্রে জেলা জজের এখতিয়ার ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মত্স্য সম্পদের সুষ্ঠু আহরণ, সংরক্ষণ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য আরো ১৫টি মিড ওয়াটার (মধ্য স্তর) ট্রলারকে লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই মন্ত্রিসভা বৈঠক থেকে বঙ্গোপসাগরে একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় ট্রলারের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। মন্ত্রিসভার সে সিদ্ধান্তটি বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মত্স্য সম্পদের সুষ্ঠু আহরণ, সংরক্ষণ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সে সময় ১৫টি মিড ওয়াটার ট্রলারের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও লাইসেন্সের জন্য কোনো ট্রলার পাওয়া যায়নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন