ইসমাম পারভেজ কনক
কিছু রাজনীতিবিদ বিভিন্ন সময় হিংসা-প্রতিহিংসায় একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ করেন দেখেছি । কিন্তু এক স্কুল ছাত্র শিশুর লাশ নিয়ে কতিপয় ব্যক্তিদের অপরাজনীতি দেখে অনেকেই আজ ঘৃণা জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন । এ ঘটনায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে।
ঘটনা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট(কদমতল) গ্রামের সোহেলের আদরের সন্তান মেধাবী স্কুল ছাত্র হামজা বাইসাইকেল যোগে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় কবুরহাট হাই স্কুলের সামনে পৌঁছালে বটতৈল থেকে আসা বেপরোয়াগামী ট্রাক তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে হামজার মাথায় ট্রাকের ডালার বডিতে প্রচন্ড আঘাত লেগে রক্তাত্ব হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পরে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন হামজাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় দ্রুত কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভর্তির কিছুক্ষনের মধ্যে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তার এ মৃত্যু সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মানবিকতায় শোক সন্তাপ্ত পরিবারে সমবেদনা জানাতে আসেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেকেই । তারা ছুটে যান হাসপাতালে। লাশের কাটাছেড়া যেন না হয় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে প্রয়য়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে যান থানায়। থানা থেকে অনুমতিও দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যেতে। পরে স্বজনরা হাসপাতল মর্গে থেকে লাশ বের করতে গেলে পুলিশ এসে জানান, আরো কিছু কাজ বাকী আছে কিছুক্ষন পরে লাশ ছাড়া হবে। এদিকে মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যার আগেই আত্নীয় স্বজন সবাই জানাজার প্রস্তুতি নিয়ে চলে আসেন হামজার বাড়িতে। কবর খুঁড়ে সবাই লাশ আসার অপেক্ষা করতে থাকেন। ওদিকে লাশ নিতে যাওয়া স্বজনরা হাসপাতাল থানায় দফায় দফায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। শেষমেশ থানা থেকে বলা হয় বেশ রাত হয়েছে এত রাতে লাশ দেয়া যাবে না, সকালে লাশ হস্তান্তর করা হবে। রাতভর অপেক্ষা শেষে সকালে আবারও লাশ নিতে যান স্বজনরা। যাওয়ার পর তাদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর যেতে থাকে যে, অন্যদের সাথে নিয়ে কেন থানায় যাওয়া হয়েছে এবং ইউনিয়নের কতিপয় নেতার কাছে গিয়ে লাশ নিয়ে আসার বিষয়ে কেন তাদের অনুরোধ করা হয়নি। এতে বেজার হয়েছেন এবং ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ কিভাবে নিয়ে আসা হয় তাও দেখবেন বলে তাদের চামচাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে পরেরদিন থানায় গিয়েও হতাশ হন স্বজনরা। থানা থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয় এলাকার কতিপয় নেতাদের উল্টাপাল্টা ফোন আসছে লাশ যেন ময়না তদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা না হয়। এর পর লাশ হস্তান্তর নিয়েই শুরু হয় নতুন রাজনীতি ! দুপক্ষের টানাটানিতে দুপুর গড়িয়ে যেতে থাকে । লাশ পরে থাকে হাসপাতালের মর্গে। এ খবরে ক্ষোভে ফেটে পরেন এলাকার সাধারণ মানুষ। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে কবুরহাট, কদমতলা, মাদ্রাসাপাড়ার শত শত সাধারণ নারী-পুরুষ নেমে আসেন রাস্তায়। তারা বটতৈল পোড়াদহ সড়কের কদমতলা মোড়ে রাস্তার উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। সকলের একই দাবী লাশ না আসা পর্যন্ত তারা রাস্তা থেকে সরবে না।
এ সময় রাস্তার দুপাশে শত শত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। তবে এ ঘটনারর বিস্তারিত শোনার পর কিছু যাত্রীও এ অবরোধে অংশ নেন। এ সংবাদ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসীর বিক্ষোভেরমুখে আধা ঘন্টার মধ্যেই ময়না তদন্ত ছাড়াই হামজার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে পরাজিত হয় এলাকার ওই কতিপয় নেতাদের অপরাজনীতি....!!
হে আল্লাহ যারা লাশ নিয়েও রাজনীতি করেন তাদের হেদায়েত দান করুন।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু তোমার এ গোলামকে জান্নাতে দাখিল করে তার বাবা-মাকে ধর্য্যধারনের তৌফিক দান করুন, আমিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন