ইসমাম পারভেজ কনক
মহিলা কওমি মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীর সম্ভ্রমের মূল্য ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন সমাজপতিরা। সংবাদকর্মীদের কাছে এ খবর পেয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ধর্ষক মুফতি আমির হামজাকে গভীর রাতে গ্রেপ্তার করেছে জাজিরা থানা পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আমির হামজাকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার সকালে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী এবং তার বাবাকে থানায় ডেকে নেয় পুলিশ। নির্যাতিত শিশুটির জবানবন্দির ভিত্তিতে জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/১/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার পিতা। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
.
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট সংলগ্ন পাইনপাড়ার চরে অবস্থিত বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসায় ৯ বছর বয়সের এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আমির হামজার বিরুদ্ধে। মুফতি হামজা স্থানীয় আজিজ শেখের ছেলে। মুফতি হামজা বিবাহিত এবং তার ১১ মাস বয়সের এক কন্যা সন্তান আছে।
.
বিশ্বস্ত সূত্রের ভিত্তিতে ঘটনার তিন দিন পর শরীয়তপুরের কয়েকজন সংবাদকর্মী শুক্রবার সরেজমিনে জানতে পারেন, গত মঙ্গলবার বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমির হামজা মাদ্রাসারই তৃতীয় শ্রেণির (নূরানী নাজেরা শাখা) এক শিশু শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসার মধ্যে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার পরিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাইলে স্থানীয় মাতুব্বররা সেটা করতে দেননি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজপতি মাতুব্বররা এলাকায় সালিশ দরবার করে অধ্যক্ষ আমির হামজাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা ও দশ ঘা জুতাপেটা করেন।
.
সংবাদকর্মীদের কাছে খবর পেয়ে এবং পত্রিকায় সংবাদ দেখে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল তার ছয় সহকর্মী নিয়ে গভীর রাতে অভিযান চালান পাইনপাড়ার চরে। পুলিশ রাত ১টার দিকে পলাতক মুফতি আমির হামজাকে আটক করে জাজিরা থানায় নিয়ে আসে। এরপর শনিবার সকালে ধর্ষণের শিকার ওই শিশু ও তার পিতাকেও ডেকে আনা হয় থানায়। শিশুটির জবানবন্দি মতে শনিবার দুপুরে জাজিরা থানায় মুফতি আমির হামজাকে প্রধান করে কয়েকজন সালিশকারসহ মোট ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
.
এ বিষয়ে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লালচাঁন মাদবর বলেন, ঘটনাটি আমি অনেক পরে শুনেছি। আমারও সালিশিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্য একটি দরবার থাকায় আমি যেতে পারিনি। তিনি বলেন, আমির হামজা খুব সম্মানী লোকের ছেলে এবং একটা বংশীয় পরিবারে বিয়ে করেছেন। তার সংসারে সন্তানও রয়েছে। আমি চাই এ ঘটনার একটা বিচার হোক, তবে সম্ভব হলে মীমাংসা করে দেওয়া ভালো।
.
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল বলেন, আমি বিষয়টি শুক্রবার বিকেলে প্রথমে সংবাদকর্মীদের কাছ থেকেই জেনেছি। এরপর রাত ১২টার দিকে আমার সহকর্মীদের নিয়ে পাইনপাড়ার চরে অভিযান চালিয়ে অনেক কষ্টে আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করি। সকালে ভিকটিম ও তার বাবাকে থানায় ডেকে আমি। ভিকটিমের জবানবন্দি অনুযায়ী শনিবার দুপুরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫। আমির হামজা ছারাও সালিশকারী কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আমি মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হবে।
.
উল্লেখ্য, মাত্র ৭ দিন আগে পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি মহিলা কওমি মাদ্রাসার ৮ বছর বয়সের এক শিশুছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই মাদ্রাসার হেড ক্লার্ক আব্দুল হান্নান। এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। ৭ দিন না পেরুতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে পাইনপাড়া চরের আরেক মহিলা কওমি মাদ্রাসায়। এমন পরিস্থিতিতে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকসহ সমাজের সচেতন মহল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন